কাঁচা আমলকি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা। আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা। আমলকি পুষ্টি গুণে ভরপুর।
কাঁচা আমলকি খেলে কি হয়। আমলকি খেতে কেমন এবং কি কি উপকারে আসে চলুন জেনে নেওয়া যাক।
আলমকি এক প্রকার ভেষজ ফল। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে যা অন্যান্য ফলের তুলনায় অনেক বেশি। বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা ছাড়াও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিতে আমলকির ভূমিকা ব্যতিক্রমী। চলুন জেনে নিই আমলকির বিভিন্ন পুষ্টিগুণ ও ঔষধিগুণ সম্পর্কে।
মহান আল্লাহ মানবতার কল্যাণের জন্য পৃথিবীতে অসংখ্য জিনিস সৃষ্টি করেছেন। এই কোটি কোটি সৃষ্টির মধ্যে এমন একটি ফল আছে যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী এবং ঔষধি গুণে পরিপূর্ণ যার নাম আমলকি। আমলকি স্থানীয় ফল হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। যেহেতু এটি সস্তা এবং সহজলভ্য তাই এর অনেক সুবিধা রয়েছে। আমলকির গাছের পাতা ও ফল উভয়ই ওষুধে ব্যবহৃত হয়। এই ফলটিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যা অন্যান্য ফলের তুলনায় অনেক বেশি। এটি ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করার বৈশিষ্ট্য আছে। তাই বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে আমলকির ভূমিকা দারুণ। এটি কিছু ধরণের ক্যান্সারের বিরুদ্ধেও কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। আজ আমরা আমলকির বিভিন্ন পুষ্টিগুণ ও ঔষধি গুণ সম্পর্কে জানবো।
See more: চিরতা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা।
আমলকির পুষ্টিগুণঃ আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা।
আমলকির অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে। এই গাছের ফল ও পাতা দুটোই ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে যা পেয়ারার চেয়ে তিনগুণ বেশি, লেবুর চেয়ে 10 গুণ বেশি, কমলার চেয়ে 15 থেকে 20 গুণ বেশি, আপেলের চেয়ে 120 গুণ বেশি, আমের চেয়ে 24 গুণ বেশি এবং কলার চেয়ে 60 গুণ বেশি। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক 30 মিলিগ্রাম ভিটামিন সি প্রয়োজন। কেউ যদি প্রতিদিন দুটি আমলকি বড়ি খান তাহলে তিনি এই পরিমাণ ভিটামিন সি পেতে পারেন। আমলকিও মুখে রুচি বাড়ায়।
আমলকির বিভিন্ন ওষধি গুনাগুণ: আমলকি কাদের খাওয়া উচিত নয়?
স্কার্ভি একটি সুপরিচিত মাড়ির রোগ। সাধারণত, শরীরে ভিটামিন সি-এর অভাবের কারণে স্কার্ভি হয়। এই রোগে মাড়িতে রক্তক্ষরণ ও ঘা, শরীরের দুর্বলতা, ত্বকের নিচে রক্তপাত, ফ্যাকাশে চেহারা এবং হাড়ের পরিবর্তন হয়। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। তাই একজন ব্যক্তি যদি প্রতিদিন মাত্র 1-2টি আমলকির খান তাহলে তিনি এর থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
আলসার চিকিৎসায় ।
পাকস্থলী বা আলসারের নাম জানেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন। মানুষ সাধারণত পেটের আলসার বলতে যা বোঝায় তাকে ডাক্তারি ভাষায় পেপটিক আলসার বলে। নিয়মিত আমলকির খেলে পেটের আলসার দূর হয়।
কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলস চিকিৎসায়।
আমলকিতে রয়েছে দ্রবণীয় ফাইবার। এটি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে এবং হজম প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। এর রস কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং হেমোরয়েডস থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।
ক্ষুধামন্দা দূর করতে আমলকি।
আমলকির গুঁড়ো মাখন ও মধুর সাথে মিশিয়ে প্রতিবার খাওয়ার আগে খেলে ক্ষুধামন্দা দূর হয়।
দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে।
আমলকি ভিটামিন এ সমৃদ্ধ অতএব, চোখের দৃষ্টি বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা রয়েছে। এটি চোখের জ্বালাপোড়া চোখ দিয়ে পানি পড়া এ সকল রোগে বিশেষ উপকার, চুলকানি এবং চোখের গা রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমলকি এবং মধু মিশিয়ে পান করলে চোখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।
গলা ব্যথা এবং ঠান্ডা দূর করতে।
মধুর সাথে আমলকির গুঁড়ো মিশিয়ে দিনে ৩-৪ বার খেলে গলা ব্যথা ও সর্দি উপশম হয়। আমলকির নির্যাস দীর্ঘস্থায়ী কাশি ও সর্দিতে উপকারী।
হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে।
উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। আমলা খাওয়া খারাপ কোলেস্টেরল দূর করতে এবং ধমনী খুলতে সাহায্য করে। রাজকীয় জেলির নিয়মিত সেবন হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
রক্তের সুগার কমাতে।
গবেষণায় দেখা গেছে আমলায় রয়েছে পলিফেনল যা রক্তে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে শরীরকে রক্ষা করে। এটি শরীরকে ইনসুলিন শোষণ করতে সাহায্য করে, যা ডায়াবেটিসের প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে।
দেহের চর্বি কমাতে।
আমলকি ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে। এটি নিয়মিত খেলে শরীরে প্রোটিনের মাত্রা বাড়ে, যা শরীরের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। এটি খেলে হজমশক্তি ভালো হয়। ফলে মানুষ মোটা হই না। তাই ওজন কমাতে চাইলে প্রতিদিন আমলকি খাওয়ার চেষ্টা করুন।
হাড় মজবুত করতে।
আমলকিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে।
রক্ত পরিষ্কার করতে।
আমলকি রক্ত পরিশোধনে খুবই কার্যকরী। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান শরীর থেকে সমস্ত টক্সিন দূর করে। আমলকি প্রতিনিয়ত সেবনে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়।
চুলের যত্নে ও খুশকির সমস্যা দূর করতে।
আমলকি হেয়ার টনিক হিসেবে কাজ করে। চুলের যত্নে এটি একটি অপরিহার্য উপাদান। দুধ খেলে শুধু চুলের গোড়া মজবুত হয় না, চুলও দ্রুত বৃদ্ধি পায়। আমলকি চুলকে খুশকি মুক্ত রাখতে এবং অকালে চুল পাকা হতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন সকালে আমলার রস মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে চর্মরোগ ভালো হয়। এটি খেলে ত্বকের সতেজতাও বাড়ে এবং মুখের ত্বকে কোনো দাগ পড়ে না।
আমলকি স্থানীয় ফল হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। যেহেতু এটি সস্তা এবং সহজলভ্য তাই এর অনেক সুবিধা রয়েছে। ত্বক, চুল ও চোখের যত্ন থেকে শুরু করে ক্যানসারের মতো রোগ প্রতিরোধে বড় ভূমিকা রাখতে পারে এই ছোট্ট ফলটি। শারীরিক স্বাস্থ্যে, আপনি প্রতিদিন অন্তত একটি আমলা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন।
FAQs:
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url